Home লাইফ স্টাইল ধনী হতে ওয়ারেন বাফেটের ১০ পরামর্শ

ধনী হতে ওয়ারেন বাফেটের ১০ পরামর্শ

প্রথমে ভেবেছিলাম আমার এলাকার জিমি জনস্ রেস্তোঁরার ম্যানেজার ওয়ারেন বাফেটের একজন বিশাল ভক্ত। কিন্তু তারপরে আমি অনলাইন ঘেটে জানতে পারি সারা দেশে জিমি জনস্ রেস্তোঁরাগুলোতেই এই প্লেকার্ডের দেখা মেলে। জিমি জনস্-এ এই প্লেকার্ড ঝুলিয়ে রাখে কেন তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।

যতদূর বলতে পারি, রেস্তোরাঁ এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের মধ্যে কোনও সংযোগ নেই এবং প্রতিষ্ঠাতা/মালিক জিমি জন লিয়াওটড এবং ওয়ারেন বাফেটের মধ্যেও কোন সম্পর্ক নেই৷

ওই প্লেকার্ডে লেখা ১০ টি নিয়ম জিমি জনস্ রেস্তোরাঁর কেউ লেখেননি। বরং, এগুলো ওয়ারেন বাফেটের জীবনী লেখক এলিস শ্রোডারের একটি নিবন্ধে লিপিবদ্ধ হয়েছে। “টেন ওয়েজ টু গেট রিচ- ওয়ারেন বাফেটস্ সিক্রেটস দ্যাট ক্যান ওয়ার্ক ফর ইউ” শিরোনামের এই লেখাটি যা ২০০৮ সালে প্যারেড ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।

জিমি জনের সৌজন্যে ওয়ারেন বাফেটের ধনী হওয়ার ১০ টি রহস্য জেনে নিন:

১. লাভের অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ করুন
আপনি যখন প্রথম অর্থ উপার্জন করেন, তখন আপনি তা ব্যয় করতে প্রলুব্ধ হলেও তা করবেন না। ব্যয়ের পরিবর্তে তা আবার বিনিয়োগ করুন। বাফেট তার জীবনের শুরুর দিকেই এই শিক্ষা নেন। উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীনই বাফেট এবং তার বন্ধু পল নাপিত দোকানে স্থাপনের জন্যে একটি পিনবল মেশিন কেনেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তাদের সেই উপার্জন দিয়ে আটটি মেশিন কেনেন পৃথক পৃথক দোকানে বসানোর জন্যে। যখন দুই বন্ধু তাদের এই উদ্যোগটি বিক্রি করে, তখন বাফেট স্টক কেনার জন্য এগিয়ে যায় এবং পাশাপাশি আরও একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন।

ওয়ারেন চক্রবৃদ্ধি সুদের শক্তি সম্পর্কে জানতেন। যদি কোনো ব্যক্তির ব্যাংকে ১০০০ টাকা থাকে এবং সেখান থেকে বাৎসরিক ১০ শতাংশ লাভ হয় তবে বছর শেষে সে ১০০ টানা নগদ অর্থ পাবে। এই ১০০ টাকা যদি সে ব্যয় করে তবে তা চিরতরে চলে যায় এবং ঐ ব্যক্তি প্রতিবছর মাত্র ১০০ টাকা আয় করতে থাকবে। যাইহোক সেই অর্থ যদি পুনরায় বিনিয়োগ করেন তবে পরবর্তী বছরে ব্যাক্তিটি ১০০০ নয় বরং ১১০০ টাকার লভ্যাংশ পাবেন। সে হিসেবে বছর শেষে ১০০ নয়, পাবে ১১০ টাকা। এই পার্থক্য সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি আপনার মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করা চালিয়ে যান, ১০ বছরের মধ্যে আপনার বছরপ্রতি মুনাফার পরিমাণ হবে ২৩৫ টাকা।

এ কারণেই বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে লভ্যাংশ দেয় না। ওয়ারেন বাফেট জানেন যে তিনি সেই অর্থ আবার বার্কশায়ারের ব্যবসায় পুনঃবিনিয়োগ করতে পারেন বা অন্য কোনো ব্যবসায় অধিগ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারী যদি তাদের লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগ করতে পারেন তার চেয়ে বেশি হারে রিটার্ন অর্জন করতে পারেন।

২. সবার থেকে একটু ভিন্ন হতে চেষ্টা করুন
সবাই কী করছে তার উপর ভিত্তি করে আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবেন না। বাফেট যখন ১৯৫৬ সালে মুষ্টিমেয় কিছু বিনিয়োগকারীর নিকট থেকে ১০০,০০০ ডলার সংগ্রহ করে ব্যবসায় শুরু করেন, তখন তাকে অনেকে ‘অডবল’ আখ্যা দেন। তখন তিনি ওমাহাতে কাজ করেছিলেন, ওয়াল স্ট্রিটে নয়। তিনি অংশীদারদের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করেছেন তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলো বাফেটের ব্যর্থতার। কিন্তু ১৪ বছর পরে যখন তিনি তার অংশীদারিত্বের হিসেব করেন তখন তা ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের কোম্পানি হয়ে যায়।

মূল্য বিনিয়োগের জনক বেন গ্রাহাম বলতেন, অন্য মানুষরা আপনার সাথে একমত হওয়া মানেই কিন্তু আপনি সঠিক নন- আপনার তথ্য এবং বিশ্লেষণ সঠিক হলে তবেই আপনি সঠিক। আপনাকে অবশ্যই একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে হবে এবং এর মানে হল যে মাঝে মাঝে আপনার অবশ্যই স্বকীয়তা থাকতে হবে। মানুষকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবেন না।

বেন গ্রাহামের মতে, “মানুষের একমত বা ভিন্ন মতের ভিত্তিতে স্টক বিনিয়োগকারী সঠিক বা ভুল প্রমাণিত হয় না। কেউ সঠিক হন তার তথ্য এবং বিশ্লেষণের নির্ভুলতার ভিত্তিতে”।

৩. অলস বসে থাকবেন না
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোন তথ্য আগে থেকে সংগ্রহ করুন এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চলেন কিনা তা নিশ্চিত করতে একজন বন্ধু বা আত্মীয়র সাথে বিষয়টি নিয় আলোচনা করুন। কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে বাফেট গর্ববোধ করতেন। তিনি যে কোনো অপ্রয়োজনীয়ভাবে বসে থাকা এবং চিন্তা করাকে “আঙুল চোষা” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ওয়ারেন বাফেট যখন কোনো বিষয়ে মনস্থির করেন তখন তিনি সে বিষয়ে সম্ভাব্য সকল প্রক্রিয়ায় পরীক্ষণ করেন। কেবল তার পায়ের আঙুল দিয়ে পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করার মতো ঠুনকো পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকেন না।

বিনিয়োগ জগতে মানুষ নির্দিষ্ট স্টক ট্র্যাক করতে ছোট একটি অংশের বিনিয়োগ করেন, তবে বাফেটের অবস্থান এর বিপরীতে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, যখন আপনাকে একটি সুযোগ দেওয়া হয়, তখন আপনার যা আছে তা নিয়ে আপনাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। যা বিনিয়োগের জগতে খুবই বিরল। মোদ্দাকথা হলো; আপনি সময় নষ্ট করতে পারবেন না- আপনাকে যে কোনো মূল্যে কাজ করে যেতে হবে।

৪. শুরু করার আগে চুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন
কোনো কাজ শুরু করার আগে আপনার দর কষাকষির অংশই সবচেয়ে বেশি হয়– যখন আপনার কাছে এমন কিছু থাকে যা অন্য পক্ষ চায়। বাফেট এই পাঠটি খুব ছোট বেলাতেই কঠিনভাবে শিখেছিলেন যখন তার দাদা আর্নেস্ট তাকে এবং তার একজন বন্ধুকে তুষারঝড়ের পরে পারিবারিক মুদি দোকান খনন করার জন্য ভাড়া করেছিলেন। তারা প্রায় ৫ ঘণ্টা কাজ করেন এবং যতক্ষণ না তাদের জমাট হাত সোজা করতে পেরেছে ততক্ষণ বেলচা চালিয়েছে। পরে, তার দাদা ৯০ সেন্টেরও কম অর্থ দু’জনকে ভাগ করে দিয়েছিলেন।

ওয়ারেন বাফেট সমঝোতা করেন না। কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করার জন্য তিনি যে মূল্য দিতে ইচ্ছুক তা নিয়ে সোজাসুজি আলোচনা করেন, “পার্থক্য তৈরি” করার জন্যে প্রয়াসে এগিয়ে কিংবা হটে যান না। তার ডিল “নাও অথবা ছেড়ে দাও” ধরনের হলেও তিনি সবসময় যুক্তিসঙ্গতভাবে ন্যয্য মূল্য অফার করেন।

৫. খুব কম খরচেরও হিসাব রাখুন
ক্ষুদ্রতম খরচেরও হিসেব রাখেন এমন ব্যবস্থাপকদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বাফেট। তিনি একবার একটি কোম্পানির মালিকানা অর্জন করেছিলেন যার মালিক যার মালিক টয়লেট পেপার গণনা করেছেন তিনি প্রতারিত হচ্ছেন কি-না তা পরখ করতে। অফিস ভবনে একমাত্র রাস্তার মুখোমুখী দেওয়ালে রং করায় তার এক বন্ধুর প্রশংসাও করেছেন বলে জানা যায়।

ওয়ারেন বাফেট এবং তার ভাল বন্ধু বিল গেটস সম্পর্কে একটি মজার উপাখ্যান রয়েছে। যখন তারা ২০১০ সালে একসাথে চীন সফর করছিলেন। মধ্যাহ্নভোজের পর বিল গেটস যখন বিল দিতে যান তখন বাফেট তাকে থামিয়ে দেন এবং ওমাহা থেকে নিয়ে আসা কুপনের একটি স্তুপ বের করেন।

টাকা নষ্ট করবেন না! সস্তা হওয়া বা কৃপণ হওয়া এবং মিতব্যয়ী হওয়ার মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে।

৬. সীমিত আকারে ধার করুন

ওয়ারেন বাফেট একজন ঝুঁকি-বিমুখ ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই বলেন যে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অন্য কারো আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হবে এমন অবস্থানে কখনোই তিনি থাকতে চান না। প্রকৃতপক্ষে, বার্কশায়ারের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং নগদ মজুদ ওয়ারেন বাফেটকে বাজারের পতনের সময় অত্যন্ত সুবিধাবাদী হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেমনটি ২০০৮ সালে বার্কশায়ার হার্লে ডেভিডসন, গোল্ডম্যান স্যাশ এর মতো প্রতিষ্ঠানে খুব সহজ শর্তে ‘লাইফ সেভিং লোন’ দিয়েছিলেন।

৮. সবসময় অবিচল থাকুন
দৃঢ়তা এবং চতুরতার সাথে প্রতিষ্ঠিত প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন। নেব্রাস্কা ফার্নিচার মার্টের প্রতিষ্ঠাতা রোজ ব্লুমকিনের ব্যবসা করার পদ্ধতি পছন্দ করেছিলেন বলে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করেছেন ১৯৮৩ সালে। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা রাশিয়ান ভদ্র মহিলা কোন ধরনের সমঝোতা করতেন না। ফলস্বরূপ তিনি একটি একটি বন্ধকী দোকান থেকে সময়ের ব্যবধানে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় আসবাবের দোকানের মালিক হয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

ওয়ারেন বাফেটের বিশ্বস্ত অনুচর চার্লি মুঙ্গের অধ্যাবসায়ের একটি ভাল সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অধ্যাবসায় এর মানে হল, আপনি কোনো কাজ শেষ করার আগ পর্যন্ত এর পেছনে লেগে থাকবেন।” আপনি জীবনে কঠিন ধাক্কা এবং কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবেন। আপনাকে কেবল অবিচল থাকতে হবে এবং এর মাধ্যমে চলতে থাকতে হবে।

৮. কখন প্রস্থান করবেন তা জানুন
কিশোরকালে বাফেট একবার রেসট্র্যাকে গিয়েছিলেন। তিনি একটি দৌড়ে বাজি ধরে হেরে যান। সে অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য, তিনি অন্য দৌড়ে বাজি ধরলেন এবং তিনি আবারও হারলেন। তিনি অসুস্থ বোধ করেছিলেন কারন তিনি প্রায় এক সপ্তাহের উপার্জন নষ্ট করেছেন। বাফেট কখনও সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি।

কোনো কিছু যেভাবে হারিয়েছেন ঠিক সেভাবেই ফিরিয়ে আনার দরকার নেই। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে একটি নির্দিষ্ট স্টকের জন্য আপনার মূল বিনিয়োগ প্রক্রিয়া ভেঙে গেছে তবে এটি বিক্রি করার এবং এ থেকে সরে আসার সময় এসেছে। পরবর্তী আরও বিনিয়োগের নতুন নতুন সুযোগ খুঁজুন এবং সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করুন।

৯. ঝুঁকি মূল্যায়ন
১৯৯৫ সালে বাফেটের ছেলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে এফবিআই ‘প্রাইস ফিক্সিং’ এর অভিযোগে আনে। তার ছেলের কোম্পানিতে থাকলে কোম্পানির লাভ এবং ক্ষতির কথা চিন্তা করার পরামর্শ দেন বাফেট। তার ছেলে দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে কোম্পানির কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর মাঝে সবচেয়ে লাভবান। তিনি পরদিন দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

ওয়ারেন বাফেট বিনিয়োগ জগতের অন্যদের থেকে আলাদাভাবে ঝুঁকির বিচার করেন। ওয়াল স্ট্রিট এবং এমবিএ ক্লাসরুমগুলোতে ঝুঁকিকে প্রায়ই অস্থিরতার সমার্থক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বাফেট এর সাথে একমত নন। বাফেট বলেছেন যে ঝুঁকি হল আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ হারানোর সম্ভাবনা।

১০. সফলতা কি তা জানুন
তার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, বাফেট ডলার দিয়ে সাফল্য পরিমাপ করেন না। ২০০৬ সালে, তিনি তার প্রায় পুরো সম্পদ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে, প্রাথমিকভাবে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি নিজের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ করার ক্ষেত্রে অর্থায়ন না করার বিষয়ে অনড়- ওয়ারেন বাফেটের নামে ভবন বা হলও নেই৷

“যখন আপনি আমার বয়সে পৌঁছে যাবেন, আপনি জীবনে আপনার সাফল্যের পরিমাপ করবেন এভাবে যে কতজন মানুষ আপনাকে আসলেই ভালোবাসে তার মাধ্যমে। আপনি কীভাবে আপনার জীবন যাপন করেছেন তার চূড়ান্ত ফলাফল এটি।”

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।